🗓️ • ✍️ ইঞ্জিনিয়ার মোঃ নাজমুল ইসলাম
হযরত ওমর (রাঃ) তায়ালা ইসলামের কাজের সমালোচক ছিলেন এবং প্রকাশ্য শত্রু ছিলেন এবং এই ওমর (রাঃ) তায়ালা নবীজিকে হত্যা করতে গিয়েছেন। হত্যা করার জন্য যখন নবীজির সামনে গেলেন নবীর চেহারা মোবারক দেখে তার দ্বিলে চোট লেগেছিল এবং সে নিজের মধ্যে আকাশচুম্বী পরিবর্তন দেখেছিল। তার পূর্বের যত নৈতিবাচক ধারনা ছিল সব পরিবর্তন হয়ে গেলো এবং তিনি নবীজিকে বললেন আমাকে কালেমা পড়িয়ে মুসলমান বানিয়ে দেন। ইসলাম কে পাওয়ার জন্য একদিন মেহনত করলেন না, চেষ্টা করলেন না, যুদ্ধ করলেন না, কষ্টও করলেন না কিন্তু আল্লাহ তাকে মুসলমান বানিয়ে দিলেন, শুধু তাই না তিনি খলিফাতুল মুসলিমিন এর জন্য কবুল হয়ে গেলেন কিন্তু কেনো সে এত তাড়াতাড়ি ও দ্রুত মুসলমান হলেন কারনটা সোজা –
- মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার দ্বিল ও মনকে এত নরম করে দিয়েছিলেন যে নবীজিকে দেখে ঐ নরম দ্বিল সহ্য করতে পারেনি, কখন নবীর দলের লোক হয়ে গেছে নিজেও বুঝতে পারেনি।
- মহান আল্লাহ তায়ালার মর্জি বা ইচ্ছা। তাই তাকে কোন পরিশ্রম ও চেষ্টা ছাড়াই ইসলামের খলিফা বানিয়ে দিলেন।
- কেউ কেউ না দোয়া করেছিলেন বিশেষ করে নবীজি নিজে দোয়া করেছিলেন – হে আল্লাহ ওমর (রাঃ) কে তুমি মুসলমানদের জন্য কবুল করে নাও। নবীদের দোয়া কখনো বিফলে যায়না।
- প্রয়োজনে আল্লাহ বিভিন্ন সময়ে এমন কিছু বান্দাকে কবুল করেন ঐ রাজ্য, এলাকা, দেশ ও অঞ্চলকে ঠিক রাখার জন্য এবং হেদায়েত দেওয়ার জন্য।
- আল্লাহ্র নিজস্ব পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপদান করার জন্য।
আমরা কোন দলের মধ্যে থাকতে চাই বা পারি? আমার মনে হয় (১ ও ৩) নং যে ব্যাখ্যা সেটাই পারি অর্থাৎ আমরা আবেগী হয়ে আল্লাহ্র কাছে দোয়া করতে পারি, সব সময় দ্বিলকে নরম করার জন্য এবং মজার বিষয় এই দুইটা কাজ কেউ না কেউ ২৪ঘন্টা আল্লাহ্র কাছে করছেন এবং তার ফলশ্রতিতে এমন একটা ঘটনা ঘটতে পারে। যার ব্যাখ্যা টা পড়ুন-
গল্প-১
বেনজীর সাহেব এমন কোন কাজ নাই যে করেননি। মদ বেচা, খাওয়া, ধর্ষণ, চুরী, ছিনতাই, ডাকাতি, জমি দখল, মানুষ হত্যা সহ হাজার রকমের অপরাধ এবং অপরাধ করতে করতে অপরাধ জগতের রাজা হয়ে গেছেন, সরকারের লোকজনও ভয় পায় তার সাথে কথা বলতে। সে তখন চিন্তা করছে দেশের একটা অংশ অপরাধ রাজ্য বানাবেন। এমন সময় শুরু হলো মহামারী – করোনা (Covid-19), সরকার সবাইকে ঘরে থাকার জন্য অনুরোধ এবং এক পর্যায়ে বাধ্য করলেন। মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক, ৩ ফুট দুরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা বা কথা বলা, দোকান পাট বন্ধ অর্থাৎ লকডাউন করে দিলেন দেশের এ প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্ত পর্যন্ত। মানুষ গৃহবন্দী এমনকি ধর্মীয় উপাসনালয় (মসজিদ, মন্দির, গীর্জায়) যাওয়া মানা। ৩ জনের বেশী একসাথে জামাতে নামাজ পড়তে পারবেনা। মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়লো, পন্যের বেচাকেনা বন্ধ হয়ে গেলো, অতিরিক্ত চিন্তা মানুষকে আকরিয়ে ধরলো, মানুষ তার সেভিংস ভেঙ্গে খাওয়া শুরু করলো, দেশের অর্থনিতি নিচের দিকে যাওয়া শুরু করলো। যে যার যার মত করে সাহায্য সহযোগিতা চাওয়া শুরু করলো এবং পেতে লাগলো। কিন্তু বেনজীর সাহেব তো কারো কাছে হাত পাততে পারছেন না কারণ মহামারী করোনার কারণে তার সব আয়ের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে, হাজার হাজার গুন্ডা-পান্ডা, শাঙ্গ-পাঙ্গ এর আয়ের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেল এবং মজার বিষয় তার আয়ের পথ হলো অপরাধ করে আয় করা, আর সেই অপরাধ এখন বন্ধ। বেনজীর সাহেব ও অন্য দশ জনের মতো চিন্তীত হয়ে গেলো, কারো কাছে হাত পাততে গেলে হয় মানুষ তাকে ভয় পাবে, না হয় পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যাবে এবং সে সমাজের কাছে ছোট হয়ে যাবে এবং তার ক্ষমতা হ্রাস পাবে, মানুষ তার দলকে ভয় পাবে না। সারাক্ষন এই চিন্তা মাথায় কাজ করছে এবং দিনে দিনে তার সঞ্চিত খাবার ও অর্থ শেষ হতে লাগলো। মাথায় তো সারাক্ষন বাজে বুদ্ধি ও অপরাধমূলক চিন্তা কাজ করতো এখন ভালো বুদ্ধি আসবে কি করে। TV রিমোট দিয়ে Channel পরিবর্তন করতে করতে এক পর্যায়ে হটাৎ করে তার একটি ইসলামিক প্রোগ্রামে নজর পড়লো এবং সেখানে একজন মাওলানা বলছেন – ৮০ বছরের কঠরপন্থী কাফের বা যত বড় বড় ধরণের অপরাধী যদি তার অপরাধ বা পাপ কাজের কথা স্বরন করে, দ্বিলকে নরম করে, বিনয়ের সাথে, ক্ষমা পাওয়ার আশায় আল্লাহ পাকের কাছে ক্ষমা চায় আল্লাহ তায়ালা তার গুনাহ বা পাপ বা অপরাধকে মুছে নিষ্পাপ মাছুম বাচ্চার মতো করে দেন এবং একজন লোক যখন কোন অপরাধে অপরাধী না হয় অর্থাৎ নিষ্পাপ হয় তখন যেই দোয়ায় করবেন সেই দোয়ায় কবুল করবেন। এই কথা শোনার সাথে সাথে বেনজীর সাহেবের দিলে চোট লেগে গেলো, একধরণের সাহস অনুভব করছেন, আশার আলো খুঁজে পাচ্ছেন, বেনজীর সাহেব দেরী না করে সাথে সাথে ওয়াসরুমে গিয়ে যতটুকু জানেন ওজু করলেন। পায়জামা-পাঞ্জাবী পড়লেন, টুপি পড়লেন এবং সোজা মসজিদের দিকে গেলেন কিন্তু বাধা আসলো কারণ মসজিদে না কারণ তিনজনের বেশী জামাতে নামায পড়ার সরকারের আইন নাই মহামারী করোনার জন্য, তবে একটা আইন আছে কেউ যদি অন্য লাইনে নামায পড়ার অনুমতিপত্র Prayers Pass নেন তাহলে পড়তে পারবেন। তিনি দ্রুত Prayers Pass মোবাইল দিয়ে করে নিলেন এবং এটা প্রিন্ট করে নিলেন যেটা মসজিদে কর্তব্যরত ব্যাক্তিকে দেখিয়ে মসজিদে প্রবেশ করলেন এবং দেখলেন এরকম Prayers Pass নিয়ে বহু লোক নামায আদায় করতে এসেছেন। যথারীতি নামায শেষ করলেন (জোহরের) এবং শেষ করতে করতেই পুলিশ Prayers Pass দেখার ও যাচাইয়ের জন্য মসজিদের দুই গেটে অবস্থান করছেন এবং সবাই সিরিয়াল ধরার জন্য চেষ্টা করছেন। বেনজীর সাহেব তিন নাম্বার সিরিয়ালে থেকে যখন পুলিশকে Prayers Pass দেখালেন তখন পুলিশ বললেন আপনি তো Over AM (যারা যেই মসজিদে নিয়মিত ফজর নামায না পরে কিন্তু অন্য ওয়াক্ত নামাযে আসেন তাদেরকে পুলিশের Prayers Pass Roll এ Over AM বলে) এবং কেউই করোনা কালে এই Over AM Pass নিয়ে নামায পড়তে পারবে না। অর্থাৎ যে যেই মসজিদে সারাবছর নিয়মিত নামায পড়েছে তার Over AM এর আওতায় পড়ে না। বেনজীর সাহেব আপনি তো Over AM নিয়ে অপরাধ করেছেন তখন পুলিশের উপরের কর্মকর্তা একজন কনস্টবলকে বললেন উনাকে থানায় নিয়ে যাও। বেনজীর সাহেবকে (কলাবাগান) থানায় নিয়ে ঐ কনস্টেবল আরেকজন পুলিশ সদস্যকে বলছেন- তুমি বেনজীর সাহেবকে ঐ রুমে নিয়ে ৩০০ টাকা রেখে ছেড়ে দাও। যথারীতি ঐ পুলিশ সদস্য বেনজীর সাহেবের কাছে ৩০০ টাকা চাইলেন আর বেনজীর সাহেব বললেন ভাই ২০০ টাকা রাখলে হয় না? যদিও মানি বেগ টাতে টাকা আছে বেনজীর সাহেবের) ২০০ টাকার কথা শুনে পুলিশ তাকে একটা ধমক দিয়ে চড় মাড়লেন। বেনজীর সাহেব তখন থানার ঘরের বাহিরে আর এদিকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। পুলিশের চড়ের সাথে সাথে বেনজীর সাহেবের চোখ দিয়ে পানি ঝড়তে শুরু করলো এবং বেনজির সাহেব ঐ গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মধ্যে দু-টো হাত আসমানের দিকে তুললেন আর জোড়ে জোড়ে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকলেন হে আল্লাহ, ক্ষমাকারী, সাহায্যকারী, দয়াবান, ক্ষমতার মালিক, অর্থের মালিক, সারা পৃথিবীর মালিক- টিভি তে মাওলানার কথা শুনে মসজিদে আসলাম তোমার কাছে মাফ চাইবো এবং চাইলাম, ভালো মানুষ হতে চাইলাম, অপরাধ ছেঁড়ে দিতে চাইলাম, দ্বিনের রাস্তায় আসতে চাইলাম, তোমার গুনগান গাইবো আর আমার শাস্তি শুরু হয়ে গেলো তাহলে টিভির মাওলানার কথা মিথ্যা হলো, তোমার কাছে কোন ক্ষমতা নাই? ক্ষমা নাই? হে আল্লাহ আমি এমন কোন অপরাধ নাই যে করিনি কিন্তু, আল্লাহ্ নামায পড়তে আসলে ঘুষ দিতে হয়, চড় খেতে হয়। যারা নামায পড়েছে বা তোমার কাজ করেছে এমন কারো কাছে তো কোনোদিন ঘুষ নেই নাই। খারাপ ব্যবহার করি নাই আর আজ নামায পড়তে আসলাম কিন্তু আমাকে ঘুষ দিতে হলো, চড় খেতে হলো, অপমান সহ্য করতে হলো তাহলে নামাযের মালিক কি পুলিশ? সত্যিই কি মাওলানা মিথ্যা বলেছিলো? হে তামাম মাখলুকাতের মালিক যদি ঐ মাওলানার কথা সত্য হয় তাহলে আমি এখন নিষ্পাপ কারণ আমি হৃদয় থেকে ক্ষমা চেয়েছি তোমার কাছে, যে ব্যাক্তি কোনোদিন মসজিদে যায়নি, আর আজ এতো কষ্ট করে Prayers Pass নিয়ে নামায আদায় করলাম, ক্ষমা চাইলাম এবং আমি ১০০ভাগ বিশ্বাস করি ঐ মাওলানার কথা মিথ্যা না, সত্যি কথা তাই আমি সম্পূর্ন নির্দোষ, আমাকে ক্ষমা করেছো এবং আমি এখন বাচ্চা শিশুর মতো নিস্পাপ এবং যা চাইবো তুমি তাই কবুল করবা। বেনজীর সাহেব তার শরীরে যত শক্তি ছিল সমস্ত শক্তি ব্যয় করে এবং জোরে জোরে কাঁদছিল, উপরিওয়ালার কাছে দোয়া করতে থাকলেন এবং থানার সমস্ত লোকজন, আশে পাশের লোকজন সবাই তার এই আকুতি শুনছিল এবং ধীরে ধীরে অনেক মানুষ তাকে ঘীরে থাকলো এবং কিছু লোক সোস্যাল মিডিয়াতে লাইভ দেখাতে থাকলেন আর সাথে সাথে গোটা দেশে তার এই লাইভ সবাই দেখতে থাকলেন এবং তার দোয়ার কারণে সাথে সাথে কাজ শুরু করলো। তিনি আল্লাহকে বললেন যারা তোমার ধর্মকে, দ্বীনকে, হুকুমকে মানতে গিয়ে কষ্ট পায়, অপমানিত হয়, আলটেমেটলী তোমাকে তারা কষ্ট দেয়, অপমান করে তাদেরকে তুমি ক্ষমা করো, হেদায়েত দাও, আর যদি হেদায়েত না থাকে ঐ সমস্ত বদ লোকজনকে বাদ দিয়ে একটা সুন্দর পৃথিবী গড়ে দাও, তোমার আসমান থেকে ফয়সালা করে দাও। মাওলা যারা ঘুষখোর, দুর্নিতীগ্রস্থ লোক তাদেরকে হেদায়েত দাও এবং কপালে হেদায়েত না থাকলে তুমি ফয়সালা করো। আলহামদুলিল্লাহ যারা যারা দেশের মধ্যে ঘুষখোর ছিলেন তারা অনেকেই এই দোয়ার সময় ঘুষ নিচ্ছিলেন এবং সোস্যাল মিডিয়াতে এই দোয়া লাইভ চলার কারণে অনেকেই এটা দেখছিলেন এবং শুনছিলেন। সাথে সাথে ঘুষ নেওয়া বন্ধ করে দিয়ে ঘুষদাতার কাছে ক্ষমা চাইতে শুরু করলেন (যাদের কপালে হেদায়েত ছিলো আল্লাহ্র পক্ষ থেকে) আর যাদের কপালে হেদায়েত ছিল না তারা বলছিল এরকম দোয়া তো প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ করছে কিন্তু কবুল হবেনা। অনেকে বলছিল ইরাকে যখন মার্কিন হামলা হয় সাদ্দামের জন্য সারা বিশ্বের মুসলমান দোয়া করেছিলেন তাও সাদ্দামকে তো বাঁচাতে পারেনি। যতসব পাগলামি, আল্লাহ্র লিলা-খেলা বুঝা বড় মুসকিল যাদের কপালে হেদায়েত ছিল না তারা এভাবেই ব্যাঙ্গাত্বক করছিল আর শেষ হওয়ার সাথে সাথে কেউ করোনা আক্রান্ত, কারো হার্টে সমস্যা, কারো ব্রেন এর সমস্যা, লিভাবের সমস্যা, কেউ কেউ শুনলেন তার আদরের সন্তান মারা গেছে, বাড়িতে আগুন লেগেছে, কারো বাবা-মা দুর্ঘটনার কবলে পরেছে। অর্থাৎ যারাই ঘুষখোর ছিলেন, পুলিশ অফিসার সহ অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের লোকজনও এরকম বিভিন্ন বিপদে পড়লেন আর তারা বিশ্বাস করতে থাকলেন যে ঘুশ নেওয়ার কারণে আজ বেনজীর সাহেবের দোয়ার জন্য আল্লাহ্ আমাদেরকে এই শাস্তি দিচ্ছেন। অনেকেই ভয় পেয়ে তখন খারাপ কাজ ছেড়ে দিবেন বলে প্রতিজ্ঞা করলেন। আল্লাহ্ তায়ালা বেনজীর সাহেবকে কবুল করলেন, হেদায়েত দিলেন তাকে তিনি ওলী বানিয়ে নিলেন যার কারণে তার দোয়া কবুল হয়েছিলো।